স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোর।
বাংলাদেশের সকল এলাকায় খালবিল নদীনালার পানি নেই বললেই চলে।দেশের অধিকাংশ এলাকায় এখন শাকসবজি ও বরো ধানের আবাদ চলছে।ইতিপূর্বে সারাদেশের কৃষক ধান কেটে নবান্নের উৎসব করেছে। ব্যতিক্রম শুধু ভবদহ এলাকার ২৭ টি বিলের পার্শ্ববর্তী জনপদের কৃষক ও কৃষিকাজে নিয়োজিত জনগন।তাদের ঘরে খাবার নেই,পরনে কাপড় নেই গোয়ালে গরু নেই,পুকুর আছে কিন্তু পুকুরে মাছ নেই। সারা বাংলাদেশ যখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দে আত্মহারা তখন ভবদহ এলাকার কয়েক লক্ষাধিক জনগন আগামীকাল কি খাবে সেই চিন্তায় আত্মহারা।
দেশের সর্বোত্র কয়েকদিন যাবত মুটামুটি শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতে এখন প্রতিটি মানুষ শীতাক্রান্ত। শীত নিবারনের জন্য দেশের সব গ্রামাঞ্চলে আগুন পোহানের জন্য শুষ্ক উঠান আছে। যেখানে পরিবারের বা আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে আগুন জ্বেলে শীত নিবারন করছে।কিন্তু মানুষ্য সৃষ্ট বিপর্যের কারনে ভবদহ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের সে সুযোগটা নেই।থাকবে কিভাবে? কারন অধিকাংশ লোকেট উঠানে আজও হাটু সমান পানি না হলেও তার কাছাকাছি পানি।আবারযদি কারো উঠানে পানি না থাকলে গত কয়েক বছর যাবৎ ফসল না হওয়ায় আগুন জ্বালাবার মতো কোন অতিরিক্ত জ্বালানি নেই।আবার শীতের সকালে শীত নিবারনের জন্য যে সূর্যের কাছে হাত পাতবে তারও কোন উপায় নেই।কারন ঘরের বাইরে গিয়ে রোদ্রে দাঁড়ানোর কোন জায়গাও নেই।
এই শীতের ভিতর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা।শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছে।এছাড়াও আছে পানি বাহিত রোগের প্রকোপ ওঅন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি উচ্চ রক্তচাপ,ডায়েবেটিস ইত্যাদি।
অত্র এলাকায় নূন্যতম চিকিৎসা সেবার জন্যও শহরে যেতে হয়। কিন্তু শহরে যাওয়ার জন্য একমাত্র রাস্তাটিতে এখনও পানি আছে। আবার পানি না থাকলে রাস্তায় পানি ওঠার ফলে রাস্তাটি অধিকাংশ জায়গা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।ফলে অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বে পথেই মারা যায়।আবার মৃত্যুর পরেও শান্তি নেই কারন লাশ দাফনের পর্যাপ্ত জায়গাও নেই।মৃত্যুর পরেও শান্তি নেই।
শীতকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও ভবদহ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারনে শীতবস্ত্র বিতরন বা কোন ধরনের ত্রানও তারা পায় না।
গত ৪ মাস যাবত অত্র এলাকার অসহায় মানুষগুলো স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত কিন্তু কোন জনপ্রতিনিধি অদ্যাবধি কোন ধরনের সরকারী সাহায্য নিয়ে তাদের সাহায্য করতে যায়নি। তাতেও তাদের কোন ক্ষোভ বা কোন দুঃখ নেই।তারা কখনও কোন রাজনৈতিক নেতার কাছে কোন ত্রাণ চায় না। তারা চায় জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে স্থায়ী পরিত্রাণ।
করোনার দ্বিতীয় আবহে দেশে নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা যত বেড়ে যাবে করোনার ঢেউ ততোধিক বৃদ্ধি পাবে। তাই ভবদহ এলাকার জনগনকে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে শীত বস্ত্র সরবরাহ করা সময়ের দাবী। সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও সমাজের বিত্তশালী লোকদের কৃপাদৃষ্টি একান্তই কাম্য।
আপনার মতামত লিখুন :