স্বীকৃতি বিশ্বাস।
প্রতিবন্ধীতা দুই ধরনের।যথাঃ১.প্রাথমিক ও ২.অর্জিত।
প্রাথমিক প্রতিবন্ধিতাঃ জন্মের সময় প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে জণ্মগ্রহণ করলে তাকে বলে প্রাথমিক প্রতিবন্ধীতা ৷
অর্জিত প্রতিবন্ধিতাঃ জণ্মের পরে বিভিন্ন দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে প্রতিবন্ধিত্ব বরন করলে তাকে বলে অর্জিত প্রতিবন্ধিতা।
প্রতিবন্ধী ৬ ধরনের যথাঃ ১.শরীরিক প্রতিবন্ধী ২.বুদ্ধি প্রতিবন্ধী,৩.দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি,৪.শ্রবনপ্রতিবন্ধি,৫.বাকপ্রতিবন্ধি,৬.বহুবিধ প্রতিবন্ধি
মাত্রা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ৪ প্রকার ১.মৃদু,২.মধ্যম,৩.তীব্র,৪.চরম।
সাধারনতঃ ৩ টিকারনে প্রতিবন্ধী হতে পারেঃ
১. জন্মের পূর্বেঃ যদি বাল্যবিবাহ হয় অথবা বয়স ৩০ বছরের উপরে হয়,গর্ভাবস্থায় পুষ্টিহীনতা,গর্ভাধারনের এক থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি মা কোনরকম কড়া ঔষধ গ্রহণ করে থাকে।গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের হাম হয় তাহলে শ্রবন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিহতে পারে, মস্তিস্কের সেরেব্রাল পালসি অথবা মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব অথবা শরীরের অভ্যন্তরের বাহুতেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷মায়ের যদি হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা বা ডায়াবেটিস থাকে এবং নেশাজাতীয় যেমন- মদ পান, ধূমপান করা, তামাক গ্রহনের অভ্যাস থাকে তবে ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী হতে পারে।
২.জন্মের সময়ঃ সময়ের পূর্বে বাচ্চা প্রসব করলে, অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে প্রসব করালে,প্রসবের সময় সঠিক ভাবে যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করলে,মাথায়আঘাত পেলে,পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব হলে প্রতিবন্ধী হতে পারে,
৩.জন্মের পরেঃমাথায় আঘাত পেলে, অক্সিজেনের অভাব,দুর্ঘটনা,উচ্চ মাত্রার জ্বর,বিষক্রিয়ামস্তিষ্কে ইনফেকশন, রোগ এবং টিউমার হলে ছেলেমেয়ে বা যেকোন সুস্থ্য মানুষও প্রতিবন্ধী হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপনের পিছনে রয়েছে হৃদয় বিদারক জীবনস্মৃতি। ১৯৫৮ সালের মার্চ মাসে বেলজিয়ামে এক দুর্বিসহ খনি দুর্ঘটনা ঘটে ও বহু মানুষ মারা যান এবং আহত হয়ে পাঁচ হাজারের অধিক ব্যক্তি চিরদিনের জন্য শারীরীকভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বা প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। ফলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ ও যন্ত্রণাময়। দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতাও তাদের কল্যাণে বিশ্বের বেশ কিছু সামাজিক দাতব্য সংস্থা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে এগিয়ে আসে। পরের বছর ১৯৫৮ সালে জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন এবং সংস্থা একসাথে আন্তঃদেশীয় স্তরে এক বিশাল সম্মেলন করেন। সেখান থেকেই প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে বহু তথ্যের হদিস মেলে।আর তাই সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিবন্ধীদের মঙ্গালার্থে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও কর্মসূচি গৃহীত হয়। খনি দুর্ঘটনায় আহত প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করার জন্য আহ্বান করা হয়। সেই সময় থেকে কালক্রমে সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য দিবসটি পালিত হয়ে অাসছে।
শারীরিকভাবে অসম্পূর্ন মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় কোভিট- ১৯ বা করোনার কারনে আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর/২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত ২৯ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২২ তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী দিবসের অন্যান্য কর্মসূচী বহাল থাকবে।
প্রতিবন্ধী কোন মানুষকে তার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সহযোগীতা করা আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।আমাদের পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র যদি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তারা সকল বাঁধাবিঘ্ন আতিক্রমে করে উঠতে পারবে এবং আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :